
ব্যবসায়ীদের সমালোচকই সত্যিকারের শুভাকাঙ্ক্ষী
একজন ব্যবসায়ী তার বিজনেসে কোনো ভুল করছে কি না তা জানার জন্য সমালোচনার অবশ্যই প্রয়োজন আছে।
আমরা সাধারণত অন্যের মুখে নিজেদের ব্যক্তিগত,পারিবারিক বিষয়ে কিংবা কাজের ব্যাপারে দোষ নিয়ে আলোচনা পছন্দ করি না।আমরা সবাই আশা করি যে,আমাদের কাজের প্রশংসা অন্যরা করুক।
কিন্তু একজন উদ্যোক্তাকে এটা মাথায় রাখতে হবে যে আলোচনা হলে সমালোচনা হবেই।আর যে ব্যক্তির কাজ নিয়ে অন্যরা সমালোচনা করে না,তার কাজটা যে ভালো হচ্ছে না এতেই বোঝা যায়।
আপনার কাজ নিয়ে যতবেশি সমালোচনা হবে সমাজে,বুঝে নিবেন আপনার ততবেশি উন্নতি হচ্ছে।আর যদি আপনার ভুল-ভ্রান্তি থাকেও,তাহলে মন খারাপ না করে নিজের দোষগুলোকে শুধরে নিয়ে আরো ভালো হবার চেষ্টা করুন।দেখবেন আপনি নিজের কাজে অন্যদের থেকে ভালো করার পাশাপাশি নিজেকেও একজন উন্নত মানুষে পরিণত করতে পারছেন।
তাছাড়া বিজনেসে সমালোচনা আবশ্যক।প্রয়োজনে আপনার যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে একটা টিম তৈরী করে নিতে পারেন যারা কি না আপনার কাজের ব্যাপারে নিরপেক্ষভাবে সমালোচনা করবে।
অন্যান্যদের মতো উদ্যোক্তারাও যে সমালোচনাকে ভালো ভাবে নিবেন না,তা অনেকটাই স্বাভাবিক।কিন্তু উদ্যোক্তারা যদি সমালোচনাকে সহজভাবে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন,আখেরে লাভটা তাদেরই হবে।
এক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা কাস্টমারদের কাছ থেকে পজেটিভ এবং নেগেটিভ উভয় ফিডব্যাক নিতে পারেন।পজেটিভ ফিডব্যাকগুলো যেরকম উদ্যোক্তাদের আনন্দ দিবে,কাজে উৎসাহ দিবে তেমনি নেগেটিভ ফিডব্যাক থেকে উদ্যোক্তারা বুঝতে পারবেন তাদের কাজের কোন অংশটা কাস্টমারদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না,কিংবা কোনোকিছু উদ্যোগে যোগ করতে হবে নাকি বাদ দিতে হবে সে ব্যাপারেও ধারণা লাভ করবেন।
তাই প্রকৃত অর্থে সমালোচনা কোনো ব্যক্তির জন্য খারাপ নয়।বরং নিজেকে আরো বেশি উন্নত করার একটা মূল্যবান সুযোগ এই সমালোচনা।
তবে এটাও ঠিক যে সব সমালোচনা পজেটিভ হয় না।সমালোচনা মূলত ২ রকমের - একটা হলো গঠনমূলক সমালোচনা এবং অপরটি হলো ধ্বংসাত্মক সমালোচনা।গঠনমূলক সমালোচনা একজন মানুষের কাজের ধারা কিংবা তার ব্যক্তিত্ব কে আরো উন্নত করতে সাহায্য করে।কিন্তু ধ্বংসাত্মক সমালোচনা মানুষকে মৃত্যুর মুখেও ঠেলে দিতে পারে।
যারা সত্যিকার অর্থে আপনার প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষী তাদেরকে চিনতে পারবেন তাদের করা গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে।কেননা যে বা যারা সত্যি সত্যিই আপনার ভালো চায়,তারা আপনার কোনো কাজে ভুল দেখতে পেলে সেটা আপনাকে ধরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কিভাবে সেই ভুলটা শুধরে নেওয়া যায় তার উপায় বাতলে দিবে।
অন্যদিকে যারা আসলে আপনার ক্ষতি চায় তাদের সমালোচনা হবে ধ্বংসাত্মকমূলক।অর্থাৎ আপনাকে কিভাবে ডিমোটিভেট করে কাজ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া যায়, সেই চিন্তা থাকে এদের মনে।এরকম সমালোচনা এখন আমাদের সমাজে অহরহ দেখতে পাওয়া যায়।যার ফলে মানুষ মানসিকভাবে মারাত্মক বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারে।
সেবা প্রকাশনীর কিশোর ক্লাসিকস সিরিজের একটা গল্প - 'এমা'।এই গল্পে দেখা যায় নায়িকা এমা উডহাউস একজন ধনী কিন্তু অহংকারী স্বভাবের মেয়ে।সে নীচু জাতের মানুষদের সাথে মিশতে পছন্দ করে না।এমার বেয়াই জর্জ নাইটলি প্রায়ই তাদের বাড়িতে আসে এবং এমার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলে।
তবে তিনি সবসময় এমার সমালোচনা করেন,তার দোষগুলো আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন।আর এইসব সমালোচনা অন্যদের মতো এমার অগোচরে করেন না,বরং সরাসরি এমাকেই বলেন।এমা অবশ্য প্রথমদিকে নাইটলির কথায় পাত্তা দেয় না।
কিন্তু পরবর্তীতে বান্ধবী হ্যারিয়েটের জীবনে এমার অতিরঞ্জিত প্রবেশ এবং অনধিকার হস্তক্ষেপের কারণে হ্যারিয়েটের জীবনে একের পর এক দুঃখ বাসা বাঁধে। এমার এসব ভুলের কারণেও নাইটলি এমার বিপক্ষে সমালোচনা করে গেছে সবসময়,কিন্তু তা অবশ্যই ছিল গঠনমূলক।শেষপর্যন্ত এমা নিজের করা ভুলগুলো বুঝতে সক্ষম হয়ে নিজেকে শুধরে নিতে পেরেছিল।
ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তারা এই গল্প পড়লে বুঝতে পারবেন সব সমালোচনাই নেগেটিভ হয় না।যারা প্রকৃত অর্থেই ভালো চায়,তাদের করা সমালোচনা থেকে উদ্যোক্তারা নিজেদের ভুল সহজেই শুধরে নিতে পারেন।তাছাড়া সবসময় নিজের চোখে নিজের ভুল ধরা পড়ে না।সেক্ষেত্রে শুভাকাঙ্ক্ষীদের সমালোচনা উদ্যোক্তাদেরকে তাদের কাজের ব্যাপারে আরো সিরিয়াস এবং ভুলত্রুটি শোধরানোর ব্যাপারে সচেতন করে তোলে।
লেখকঃ ফ্রিল্যান্সার লেখক ইপ্রফিট এবং শিক্ষার্থী (মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ)
সিনথিয়া