কনটেন্টের প্রেমে পড়ে কেনাকাটা করেন

অনলাইনে কেনাকাটা করে মোটামুটি ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে হাসনা আক্তারের। তিনি মূলত কেনাকাটা করেন সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। কেনাকাটার পাশাপাশি বিক্রেতাদের সাথে হাসনার গড়ে উঠে সুসম্পর্ক। এ সম্পর্ক তাদের মাঝে আস্থা ও ভরসা বৃদ্ধি করে। তাই কেনাকাটা করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি বা অভিজ্ঞতা হয় না হাসনার। তিনি বিক্রেতাদের আন্তরিকতা আর সম্মান পেয়ে মুগ্ধ হন। 

নিঝুম ইতিমধ্যে গামছা দিয়ে গাউন ও লং স্কার্ট করেছেন। বর্তমানে কুর্তি, টপস ও বেবি ড্রেসে কাজ শুরু করছেন। সেই সাথে শাড়ি ও পাঞ্জাবিও করতে চান। তিনি ব্লাউজ, ফতুয়া, শাল, শার্টের কাজ করতে চান হালুয়াঘাটের গামছা দিয়ে। 

কারো কাছে অনলাইনে কেনাকাটা শখের হলেও সাথীর বেলায় তা মৌলিক চাহিদার মতই। নিজের এবং ছেলের যাবতীয় প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করলেও মাঝে মাঝে পূরণ করেন নিজের শখ। হঠাৎ অতিথির আগমন ঘটলেও ভরসা হয়ে দাঁড়ায় অনলাইন প্লাটফর্ম গুলো।

আমার স্বপ্নটাই একটা দেশীয় পণ্যকে ঘিরে যাকে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে নেয়ার প্রত্যয় আমি রাখি। ই-কমার্স সেক্টর গত ৫ বছর আগেও এতো অগ্রগামী ছিলো না। কিন্তু সময় ও যুগের চাহিদায় এখন তা বড় একটি ইন্ডাস্ট্রিতে রূপ নিচ্ছে। একটি দেশের অর্থনীতি দেশী পণ্যের উপর নির্ভর করে গড়ে তুলতে পারলে সেই দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হওয়াটা অবশ্যম্ভাবী।

সত্যি বলতে যখন কাজ শুরু করি তখন দেশীয় পণ্যের এত সম্ভাবনা আছে তা বুঝতে পারিনি। এত কিছু আছে আমাদের দেশে।কিন্তু আমরা সেগুলো তুলে আনতে পারছি না।দেশীয় পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির এত সম্ভাবনার কথা জানতে পেরেছি ই-ক্যাবের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শ্রদ্ধেয় রাজীব আহমেদ স্যারের মাধ্যমে। দেশীয় পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি দেশের বিভিন্ন স্থানের সম্ভাবনাময়,বিলুপ্ত প্রায় পণ্য গুলোকে তুলে আনতে পারবে এবং ছড়িয়ে দিতে পারবে বিশ্ব দরবারে এমনটাই স্বপ্ন দেখি। 

নিজের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার এক ধরনের চিন্তা গ্রো করতে থাকে। এ চিন্তা থেকেই টাঙ্গাইলের তাঁতের সুতি, হাফসিল্ক, খাদি সিল্ক, এন্ডিকটন, জুট কটন সহ নানা রকম দেশীয় শাড়ি, মেয়েদের রেডি কুর্তি নিয়ে কাজ শুরু করি। নীল আমার ছেলের নাম আর মৃত্তিকা অর্থ মাটি। নিজ উদ্যোগের নাম ছেলের নামের সাথে সমন্বয় করে রেখেছি। 

ই-কমার্স সম্পর্কে একদম শূন্য জ্ঞান ছিল যখন দেশি পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করি তখন ইক্যাবের সাবেক ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাজীব আহমেদ স্যারের মুখে শুনে ই-কমার্স সম্পর্কে আগ্রহ হয়,এবং ডিজিটাল স্কীলস ফর বাংলাদেশ গ্রুপ থেকে ই-কমার্স সম্পর্কে ধারণা পাই।কাজ শুরু করার পর এক সময় অনুভব করি ই-কমার্সকে ক্যারিয়ার হিসেবে যদি পুরোপুরি ভাবে বেছে নেই তাহলে আমার যে একটা স্বপ্ন ছিল বুটিক শপের সেটা পূরণ হবে এবং দেশি পণ্যকে তুলে ধরতে পারবো ই-কমার্সের মাধ্যমে।

বাংলাদেশের শাল আনেক উন্নত মানের  সেই বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।দেশি শালের বর্তমান অবস্থা তূলে ধরতে চেয়েছি।তাছাড়া দেশি শালের বুননের ধাপ ও দেশি শালের যত্ন করার ব্যাপারটাকেও জোর দিয়েছি। 

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যের প্রতিটি খাতকেই বৈশ্বিক স্তরে উত্তরণের মাধ্যমে বিশ্ব বাজার দখলের অভিপ্রায়ের কথাও জোর দিয়েই ব্যক্ত করেন মন্ত্রী পীযুষ গোয়েল। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, ভারত প্রতিটি সেক্টরেই বিশ্বের অন্যতম সেরা হতে চায় এবং বিশ্বে বাজারের উল্লেখযোগ্য পরিমান দখল করতে চায়। 

ইন্টারনেটের দ্রুততার কারণে, লাখ লাখ মানুষ এক মুহূর্তে আমার পেইজ/ওয়েবসাইট/প্রোফাইলের মাধ্যমে আমার কাজ সম্পর্কে জানতে পারছে। ক্রেতা তৈরী বা ব্রান্ডিং করাটা অনেক সহজ। ই-কমার্সে কাজ করার কারণে আমি যেকোনো স্থান থেকেই আমার কাজটা করতে পারছি, ঘরে বসে নিজের ব্র্যান্ডিং মজবুত করতে পারছি,একই সাথে ক্রেতা তৈরি করতে পারছি,এমন অনেক সুবিধার কারণেই ই-কমার্সকে বেঁছে নিয়েছি নিজের ক্যারিয়ার হিসাবে। 

সন্তান জন্মের পর চাকুরী ছেড়ে দেওয়ার ফলে অনেকটা ডিপ্রেশনে চলে যাই। বাবুকে বাসায় রেখে চাকুরীতে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। তাই কিছু করার তাড়নায় আমার এই উদ্যোগ গ্রহন। আমি মনে করি ই-কমার্স নেক্সট জেনারেশন বিজনেস প্ল্যাটফর্ম। ধীরে ধীরে ই-কমার্সের দিকে সবকিছু নির্ভরশীল হয়ে পরছে। নিজের প্রতিভাকে অন্যের সামনে তুলে ধরার সহজ উপায় হচ্ছে ই-কমার্স।তাই ই-কমার্সকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছি।

মায়ের মৃত্যুর পর প্রথম ভাবতে শুরু করলাম আমাকে কিছু করতে হবে। পড়াশোনা করে বসে আছি। হাসবেন্ড বিচারক হওয়াই যে কোন জায়গায় হুট করে একটা চাকরিতে যাওয়া সম্ভব ছিল না। ২০১৪/১৫ সালের দিক থেকে ই আমি অনলাইনে শপিং করতাম। ২০১৬ সালে আমার মনে হলো আমি তো ঘরে বসেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি।

একজন নারী উদ্যোগক্তার জন্য ই-কর্মাসে বিজনেস করা সবচেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম। বাসায় বসে থেকে সংসারের কাজ করা , বাচ্চাদের দেখাশোনা করা , পরিবারের সবকিছু সামলানো সবই করা যায়। ই-কর্মাসে বিজনেস করার ফলে নারীরা তাদের স্বাবলম্বী করতে পারছে।  নিজেকে সবার সামনে তোলে ধরতে পারছে।নিজের ভেতরের প্রতিভা প্রকাশ করতে পারছে। প্রয়োজনে পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করতে পারছে। 

কোটা শাড়ি গুলো বাংলাদেশের তাঁত শিল্প থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। যেনো এই শাড়ি কোনোভাবেই দেশিয় তাঁত শিল্প থেকে হারিয়ে না যায় তাই আমি এই পণ্যকে বেছে নিয়েছি সিগনেচার পণ্য হিসেবে। প্রচারেই প্রসার আমরা আমাদের দেশিয় পণ্যকে যত ভালোভাবে প্রচার করতে পারবো ততই তার চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। আমার উদ্দেশ্য হলো তাঁতিরা যেনো আবারো আগ্রহী হয়ে চৌখুপী কোটা শাড়ি গুলো তাঁতে বুনেন এবং সবাই এই শাড়ির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে।

গত এক বছরে ৯৫ শতাংশ বিক্রি এসেছে পার্সোনাল প্রোফাইলে পণ্য নিয়ে লিখে। আমি মনে করি নিজের প্রোফাইল নিজের রাজত্ব এবং নিজের পণ্য নিয়ে লেখার সবচেয়ে ভালো জায়গা। 

পেইজ, গ্রুপ থাকলেও আমার বিজনেসের ৯০ ভাগ বিক্রিই আমার ফেসবুক পারসোনাল প্রফাইল থেকে হয় আর আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভাল রেসপন্স পাই। সামনে ইচ্ছে আছে ওয়েবসাইট করার।